বিশেষ প্রতিনিধি::
সিলেট গ্যাস ফিল্ডে আবার অর্থের বিনিময়ে এক শ্রমিক নিয়োগ এর অভিযোগ উঠেছে সিবিএ নেতা প্রদীপ কুমার শর্মার বিরুদ্ধে।
জানা যায় গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) নৈমিতিক হাজিরা ভিত্তিতে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের অধীনস্থ রশিদপুর ফিল্ডে ড্রাইভার পদে সিরাজুল ইসলাম নামে এক শ্রমিককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগের খবর সাথে সাথে ছড়িয়ে পড়ে সর্ব মহলে।
অভিযোগ উঠে কর্মচারী ইউনিয়ন ( রেজি নং (বি ১১০৬) বর্তমান ( সি বি এ) সভাপতি প্রদীপ কুমার শর্মা ও যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম তিন লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই শ্রমিককে নিয়োগ দিয়েছেন। বিষয়টি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর পূর্বে ২০২০ সালে ( সিবিএ) থাকাকালীন সময়ে গ্যাস ফিল্ড প্রধান কার্যালয়ে অর্থের বিনিময়ে ৫২ জন শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন প্রদীপ কুমার শর্মা। তৎকালীন সময়ে এই সংবাদ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। এছাড়াও গত ১৮ই মে সিলেট গ্যাস ফিল্ডে প্রদীপের ‘ম্যাজিক’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশি খবরে উঠে আসে তার অনেক অনিয়ন দুর্নীতির কথা ।
জানা যায় গত পাঁচ আগস্ট দেশের ক্ষমতার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে আওয়ামী লীগের লেবাস বদলে আবারও বিএনপি হয়ে যান প্রদীপ কুমার শর্মা। জৈন্তাপুরের স্থানীয় বিএনপি ও জামাতের নেতাকর্মীদের সমন্বয় করে বিএনপি সমর্থিত কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ কুমার শর্মার নেতৃত্বাধীন বর্তমান (সিবিএ)। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবানকে গ্যাস ফিল্ড প্রশাসনকে চাপ সৃষ্টি করে শোকজ করান। এবং সংগঠনের সিনিয়র নেতা আব্দুল খালিক, মুতালেব,নাজমুল ইসলাম, মঞ্জুর হোসেন সহ অন্যান্য প্রায় ২৫ জন নেতা ও সমর্থকদের সিলেট গ্যাস ফিল্ড প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ফিল্ডে বদলি করান।
শুধু তাই নয় প্রদীপ কুমারের নেতৃত্বে জৈন্তাপুরের চিকনাগুল পানিছড়ার গ্যাস ফিল্ডটির প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত সিবিএ অফিসে তালা লাগিয়ে দেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা।
আরও জানা যায় চলিত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মচারী লীগের সিবিএ'র। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় ও তাদের কোন কার্যক্রম না থাকায়। গত ৫ই মে সরকারের, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর, আঞ্চলিক শ্রম দপ্তর, কর্মচারী লীগ (রেজিঃনং ১৮৮৯) কে কোন-প্রকার অবগত বা চিঠি প্রদান না করে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড-এর কর্মচারী ইউনিয়ন, রেজিঃ নং-বি-১১০৬-কে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি (সিবিএ) ঘোষনা করে। এর পর থেকে বেপরোয়া হয়ে উঠেন প্রদীপ কুমার শর্মা। তার নেতৃত্বে গ্যাস ফিল্ডে চলছে ও নিয়ম-দূর্নীতি বিভিন্ন টেন্ডার নিয়ে ঘোষ বাণিজ্য।
এদিকে সিলেট গ্যাস ফিল প্রধান কার্যালয় নৈমিত্তিক হাজিরা ভিত্তিতে ৫২জন সহ অন্যান্য বিভিন্ন ফিল্ডে মোট ২৮০ জন শ্রমিক রয়েছেন তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করণের জন্য দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন।
তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের কোন ব্যবস্থা না করে বর্তমান সিবিএ আবারো শ্রমিক নিয়োগ নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে একাধিক শ্রমিক জানান আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি গ্যাস ফিল্ড প্রশাসনসহ উপজেলা চেয়ারম্যান এমপি মন্ত্রীসহ সামাজিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেকে অবগতি করেছি। গ্যাস ফিল্ড প্রশাসন আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে আশ্বস্ত করেছিলেন কিন্তু আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ বা আইডি এবং প্রত্যয়ন প্রদান করেন নাই । এখনো আমাদের এ বিষয়গুলো কোন সূরাহা হয়নি। আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়ার পথে শ্রমিক প্রতিনিধি বর্তমান( সিবিএ) এর কাছে জানালে তারা শুধু আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন।
এছাড়া গ্যাস ফিল্ড প্রশাসনকে চাপ সৃষ্টি করে পূর্বের মতো নৈমিত্তিক হাজিরা ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দিতে চাপ দিয়ে আসছেন প্রদীপ । এর ধারাবাহিকতায় গ্যাস ফিল্ড অধীনস্থ রশিদপুর ফিল্ডে ড্রাইভার পদে একজন শ্রমিক নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিবিএ সভাপতি প্রদীপ কুমার শর্মা জানান এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই গ্যাস ফিল্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বলতে পারবেন।
এ বিষয়ে রাশিদপুর ফিল্ডের উপ-মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌ: সুমন বিকাশ দাস জানান আমার দপ্তরে একজন ড্রাইভার লাগবে মর্মে প্রধান কার্যালয়ে চিঠি প্রেরণ করেছিলাম তার প্রেক্ষিতে নৈমিত্তিক হাজিরা ভিত্তিতে সিরাজুল ইসলাম নামে একজন ড্রাইভারকে আমার দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। সে কিভাবে নিয়োগ পেল এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক নিয়োগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলাউদ্দিন এন্টারপ্রাইজ এর প্রোপাইটর আলাউদ্দিন জানান গ্যাস ফিল্ড সার্ভিস দপ্তর থেকে যেই তালিকা পাঠানো হয় সে অনুযায়ী আমি টাকা প্রদান করে থাকি এর বাইরে আমার কিছু জানা নেই।
নিয়োগ প্রাপ্ত ড্রাইভার সিরাজুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমাকে সার্ভিস থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে সার্ভিসের জিএম স্যার ভালো বলবেন উনার সাথে যোগাযোগ করুন। টাকার বিনিময় চাকরি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান টাকা ছাড়া এই দেশে কিছু হয় না কিছু না কিছু দিয়েই তো এই অবস্থানে এসেছি।
জিএম ফরিদুল হুদা সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এই বিষয়ে আমার জানা নেই
এবিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. মোঃ আব্দুল জলিল প্রামানিক জানান অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।