নিউজ ডেস্কঃ
বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীন সুনামগঞ্জের ছাতকের কংক্রিট স্লিপার কারখানাটি বর্তমানে উৎপাদনহীন অবস্থায় পড়ে আছে। বছরের অধিকাংশ সময়ই কারখানাটি বন্ধ থাকে। একাধিকবার সীমিত পরিসরে চালু হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। অব্যবস্থাপনা, জনবল সংকট ও কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার ফলে দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানটি কার্যত অচল।
ছাতক রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত মাত্র দুইবার কারখানাটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। প্রথমবার ২ ফেব্রুয়ারি চালু হওয়ার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দফায় ৪ মে শুরু হলেও কাঁচামালের অভাবে ২৯ মে পুনরায় বন্ধ হয়ে পড়ে।
কারখানাটিতে জনবল সংকট অত্যন্ত ভয়াবহ। ওয়েল্ডার গ্রেড-১, লাইনম্যান, মেশিন অপারেটর, ল্যাব সহকারী, গাড়িচালক, স্টোর টেন্ডার, নিরাপত্তাকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্তত ২০টির বেশি গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে শূন্য। এতে উৎপাদন সচল রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। বিদ্যুৎ বিভাগের ফোরম্যান পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খান দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন, তবে নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে কারখানার উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন। জানা গেছে, তিনি মাসে একবার এসে রাত্রিযাপন করে চলে যান।
১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর ছাতক কংক্রিট স্লিপার কারখানার যাত্রা শুরু হয় দৈনিক ২৬৪টি স্লিপার উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে। কাঠের স্লিপারের গড় আয়ু ১০ বছর হলেও কংক্রিট স্লিপারের আয়ু প্রায় ৫০ বছর। রেললাইনকে আরও টেকসই, মজবুত ও নিরাপদ করতে তৎকালীন সরকার দেশের একমাত্র এই কংক্রিট স্লিপার প্ল্যান্টটি ছাতকে স্থাপন করে।
প্রথমদিকে উৎপাদন সচল থাকলেও ২০০০ সালের পর থেকে নানা অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে উৎপাদনে ধস নামে। মাঝে মধ্যে ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২০ সালে এটি আংশিকভাবে চালু হলেও টিকেনি বেশিদিন। বর্তমানে প্ল্যান্টটি পুরোপুরি অচল অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে সিলেট বিভাগের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (ছাতক দায়িত্বপ্রাপ্ত) আজমাঈন মাহতাব জানান, সাময়িক কিছু সমস্যার কারণে প্ল্যান্টটি বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ ও ছাতক বাজারের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, কারখানাটি খুব শিগগিরই পুনরায় উৎপাদনে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।