বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের দাবী কোহিনুর শিপইয়ার্ডের ভবনটি বনায়ন'র আওতায় তুলাতলী মৌজাই পড়েছে, ইয়ার্ডের মালিক রাজা কাসেম বলছে ফৌজদারহাট মৌজায় তাঁর ইয়ার্ড! এই দ্বন্ধে শিপইয়ার্ডটি গুড়িয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা দাবী করেছে ক্ষতিগ্রহস্হ রাজা কাসেম। এবং তিনি ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফৌজদারহাট জেলেপাড়াস্হ কোহিনুর শিপইয়ার্ডে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী, র ্যাব, পুলিশ, আনসার ও ডিবি মোতায়েনের মাধ্যমে রাজা কশেমের কোহিনুর শিপইয়ার্ডের মূল ভবন ও স্হাপনা উচ্ছেদ শুরু করে সকাল ১০ টায়।
[video width="640" height="356" mp4="https://www.deshenews24.com/wp-content/uploads/2025/06/Messenger_creation_CAFB80D3-3064-422C-B79F-53694054C40D.mp4"][/video]
এসময় এলাকাবাসী বাধা দিতে চাইলে আইশৃঙ্খলা বাহিনী ধাওয়া করলে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আল আমিনের নির্দেশে ইয়ার্ডের মূল ভবনটি উত্তর দিক থেকে ভাংগতে শুরু করে ইস্ক্যাভেটর। এসময় পুলিশ,র্যাব,সেনাবাহিনী, আনসার গোয়েন্দ বিভাগের লোকজন উপস্হিত ছিলেন। তবে রাজা কাশেমের দাবী আদালতে মামলা থাকার পরও গায়ের জোড়ে স্হাপনাটি উচ্ছেদে তার প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের ম্যাজিষ্ট্রেট আল আমিন প্রতিনিধিকে জানান, ১০নং সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট উপকূলে কোহিনুর শিপইয়ার্ডের স্হাপনাটি ১নং খাস খতিয়ানের তুলাতুলী মৌজায় অবস্হিত। কিন্তু ইয়ার্ডের মালিক ওনার স্হাপনাটির জন্য তুলাতুলী মৌজায় তিনি কোনো লিজ বা অনুমোদন নেননি, তিনি লিজ নিয়েছেন সলিমপুর মৌজার। তাই আমরা স্হাপনাটি উচ্ছেদের জন্য কার্যক্রম চালাচ্ছি। তবে তিনি সলিমপুর মৌজায় লিজ নেয়ায় আমরা ইয়ার্ডের বাকি অংশে যাচ্ছি না।
এদিকে উচ্ছেদ অভিযানের সময় বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনী, র্যাব,পুলিশ,আনসার,ডিবি ছাড়াও আরো উপস্হিত ছিলেন, জেলা প্রশাসন ম্যাজিষ্ট্রেট মাইনুল হোসেন,সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মজিবুর রহমান, ভাটিয়ারী ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোঃ জয়নাল আবেদীন, রনকান্তি সুশীল প্রমূখ।
অপরদিকে কোহিনুর শিপ ইয়ার্ড মালিক রাজা কাশেম প্রতিনিধিকে বলেন, তারা আমার ইয়ার্ডের ভিতরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে বড় দুইটি স্ক্যাভেটর দিয়ে তিনতলা বিল্ডিংটি ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। অথচ জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর,ফায়ার সার্ভিস,বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র এবং অনুমোদন নেয়া হয়।
এ সমস্ত বিভিন্ন সংস্হা গুলো সলিমপুর মৌজায় আমার স্হাপনা দেখেই ছাড়পত্র বা অনুমোদন দেয়।স্হাপনা উচ্ছেদে তার প্রায় ১০০ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানান। বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় আমার প্রতি জুলুম করেছে। সলিমপুর মৌজাকে তুলাতলী মৌজার অংশ বলে একতরফা দাবী করে আমার ইয়ার্ডটি তছনছ করে দিল।
তিনি আরো বলেন,বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় একে একে চারটি মামলা করে সর্বোচ্চ আদালতে হেরে যায়,একটি মামলা তারা নিজেরায় তুলে নেয়। এরপরও একতরফা কোনপ্রকার নোটিশ ছাড়াই আজ বুধবার সকালে বিভিন্ন বাহিনী নিয়ে আমার প্রতিষ্ঠানটি অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করলো, ক্ষতি করলো শতকোটি টাকার সম্পদ। আমি ন্যায় বিচার চাই।
সম্প্রতি ইয়ার্ড ভূমি লিজ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের এক রিপোর্টে দেখা যায়,ইয়ার্ডের জন্য বরাদ্ধের প্রতিবেদনে দেখা যায়,সলিমপুর,ভাটিয়ারী,জাহানাবাদ,দক্ষিন,মধ্য,উত্তর সোনাইছড়ি, শিপ ইয়ার্ডের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে।
আর উপকূলীয় বনায়নের জন্য লতিফপুর, নডালিয়া,গুপ্তাখালী, গুলিয়াখালী, সৈয়দপুর ভাটেরখীল মৌজার ৬৮১৪,৯৫৫ একর উপকূলীয় ভূমি সংরক্ষিত উপকূলীয় বনায়নের জন্য অসুমোদিত। এই শিপইয়ার্ডটি বনায়নের মৌজায় পড়েনি। তাই
শিপইয়ার্ডের জন্য অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। সীতাকুণ্ড নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফখরুল ইসলাম প্রতিনিধিকে জানায়, চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার তুলাতলী মৌজায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাসজমি উদ্ধার করেছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সীতাকুণ্ড উপজেলার তুলাতলী মৌজার বিএস খতিয়ান নং-০১, বিএস দাগ নং-৪৯৪ এর আওতাধীন মোট ১১৩.৬৩ একর জমির মধ্যে অবৈধভাবে দখলকৃত সরকারি খাস জমি উদ্ধারে আজ একটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
তুলাতুলী মৌজার অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে ২০/০৩/২৫ তারিখে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে দখল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে অবৈধ দখলদারদের নোটিশ প্রদান করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের পরও দখলদারগণ দখল না ছাড়ায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আল আমিন হোসেন ও মোঃ মঈনুল হাসান-কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
আজকের অভিযানে একটি ২ তলা বিল্ডিং, ১ তলা একটি বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, বৈদ্যুতিক খুটি এবং কাটা তারের বেড়া অপসারণ করা হয়। অভিযান পরিচালনায় সহায়তা করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার বাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সকল অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।